May 24
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৭ জুন ১৮৩৮ – ৮ এপ্রিল ১৮৯৪) বাংলা সাহিত্যের একজন মহান লেখক, কবি, প্রবন্ধকার ও সাংবাদিক। তাঁকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের জনক বলা হয়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার কান্দাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন একজন সরকারী কর্মচারী। তিনি হুগলি কলেজ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনিই প্রথম বাঙালি যিনি বিএ পাশ করেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যজীবন শুরু হয় কবিতা দিয়ে, তবে পরে তিনি উপন্যাসে মনোনিবেশ করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'দুর্গেশনন্দিনী' প্রকাশিত হয় ১৮৬৫ সালে। এরপর একে একে তিনি লিখেছেন বহু বিখ্যাত উপন্যাস, যেমন: কপালকুণ্ডলা, আনন্দমঠ, বিষবৃক্ষ, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, দেবী চৌধুরানী। তাঁর রচনায় জাতীয়তাবাদ, সামাজিক সচেতনতা এবং ইতিহাসের প্রতি গভীর অনুরাগের প্রতিফলন দেখা যায়। তাঁর কলম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। তাঁর লেখা "আনন্দমঠ" উপন্যাসে "বন্দে মাতরম" গানটি প্রথম ব্যবহৃত হয়, যা পরে ভারতের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা লাভ করে।
বঙ্কিমচন্দ্র ১৮৭২ সালে 'বঙ্গদর্শন' নামক একটি সাহিত্যপত্র প্রকাশ করেন। এই সাময়িকপত্র বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রচার এবং উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাহিত্যিক কাজের পাশাপাশি বঙ্কিমচন্দ্র একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবেও কাজ করেছেন। তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিযুক্ত ছিলেন এবং দীর্ঘকাল রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শুধুমাত্র একজন সাহিত্যিক নন, তিনি ছিলেন একজন চিন্তাবিদ ও সংস্কারক। তাঁর সাহিত্য জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়েছিল, যা ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেরণাস্বরূপ হয়ে ওঠে। তাঁর "বন্দে মাতরম" আজও কোটি কোটি ভারতীয়ের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে শুধু একটি নামই নয়, বরং একটি যুগের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর লেখনী যুগে যুগে পাঠকদের অনুপ্রাণিত করেছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে। বাংলা সাহিত্য যাঁর হাত ধরে আধুনিকতার পথে পা রেখেছে, সেই বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় চিরস্মরণীয়।