শেয়ার
করুন

ওয়েবসাইটি শেয়ার করুন

জীবনানন্দ দাশ: এক নিঃসঙ্গ কবির নিঃশব্দ সাহিত্যের জগৎ

July 10

জীবনানন্দ দাশ: এক নিঃসঙ্গ কবির নিঃশব্দ সাহিত্যের জগৎ

বাংলা সাহিত্যে কবিদের মধ্যে জীবনানন্দ দাশ এক ব্যতিক্রমধর্মী ও নিঃশব্দ প্রতিভার নাম। তিনি ছিলেন রবীন্দ্র-পরবর্তী আধুনিক কবিতার এক অগ্রগণ্য পথিকৃৎ। তাঁর কবিতায় ফুটে উঠেছে প্রকৃতির নিস্তব্ধতা, মানুষের নিঃসঙ্গতা, সময়ের ক্লান্তি এবং জীবনের রহস্যময় গভীরতা। তাঁকে বলা হয় "নির্জনতার কবি" বা "নিঃসঙ্গতার কবি", কারণ তাঁর কবিতায় যেন একান্ত নিজস্ব এক জগৎ গড়ে উঠেছে।

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় বরিশালেই। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। জীবনে বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনার পাশাপাশি সাহিত্যে মনোযোগ দেন। শান্ত স্বভাবের এই মানুষটি প্রকাশভঙ্গীতে নয়, বরং শব্দের ভেতরেই নিজের অনুভবকে বলিষ্ঠভাবে প্রকাশ করতেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপাতা’ প্রকাশিত হলেও তিনি পরিচিতি লাভ করেন ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ এবং ‘বনলতা সেন’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। 'বনলতা সেন' কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা হিসেবে বিবেচিত। এই কবিতায় কবি সময়ের গভীরতা ও এক ক্লান্ত পথিকের আরাম খোঁজার গল্প তুলে ধরেছেন – যেখানে শেষ আশ্রয় এক নারীর চোখ।

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় বাংলার প্রকৃতি এক বিশিষ্ট রূপে ধরা দেয়। ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থে তিনি বাংলার গাঁ, নদী, ধানক্ষেত, পাখি ও মেয়েদের সৌন্দর্যকে এমনভাবে চিত্রিত করেছেন, যা পাঠকের মনে গভীর দাগ কাটে। তাঁর কবিতা শুধুই প্রকৃতি নয়, বরং মানুষের অন্তর্জগৎ, সময়ের ক্ষরণ, স্মৃতি এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা – সব কিছুই ধারণ করে। তাঁর মৃত্যুর পরে আরও অনেক অপ্রকাশিত রচনা ও উপন্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। ‘মাল্যবান’, ‘সুতীর্থ’ ইত্যাদি উপন্যাসে মানুষ ও সমাজের গভীর সংকট ও মনস্তত্ত্বের চিত্র পাওয়া যায়।

জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকে আমরা শিখতে পারি – কীভাবে নিঃসঙ্গতা থেকেও সৌন্দর্য জন্ম নিতে পারে, কীভাবে নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝেও থাকে ভাষাহীন এক স্পন্দন, এবং কীভাবে কবিতায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হয়ে উঠতে পারে সর্বজনীন বোধ। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলি: ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, রূপসী বাংলা, মহাপৃথিবী, এক পয়সায় দু’পয়সার গল্প (গল্পসংকলন), মাল্যবান (উপন্যাস) ।