শেয়ার
করুন

ওয়েবসাইটি শেয়ার করুন

সেলিম আল দীন: বাংলাদেশের নাট্য জগতের মহীরুহ

September 11

সেলিম আল দীন: বাংলাদেশের নাট্য জগতের মহীরুহ

বাংলাদেশের আধুনিক নাট্য আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব হলেন সেলিম আল দীন। তিনি শুধু নাট্যকার নন, বরং বাংলা নাটকের এক নতুন ধারার স্রষ্টা। তাঁর সাহিত্যকর্ম, গবেষণা ও নাট্যভাবনা বাংলা নাটককে দিয়েছে এক অনন্য পরিচিতি।

জন্ম ও শিক্ষাজীবন
সেলিম আল দীন জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনী জেলার সোনাগাজীতে। ছোটবেলা থেকেই তিনি সাহিত্য ও নাটকের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। এখান থেকেই নাটকের প্রতি তাঁর গবেষণা ও সৃজনশীল কাজ বিস্তৃত হয়।

নাট্যধারা ও অবদান
সেলিম আল দীন বাংলা নাটকে নতুনত্ব আনার জন্য পরিচিত। তিনি নাটককে শুধু বিনোদনের মাধ্যম ভাবেননি, বরং এটিকে সমাজ-সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখেছেন। তাঁর নাটকে গ্রামীণ জীবন, লোকসংস্কৃতি, লোককথা, মিথ এবং ইতিহাসের মেলবন্ধন দেখা যায়। তাঁর নাট্যরীতিকে বলা হয় “পোস্ট-ট্যাগোরিয়ান নাট্যধারা”। তিনি বাংলাদেশের নাটককে ইউরোপীয় ধারা থেকে বের করে এনে দেশীয় কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত করেছিলেন। নাটকের মাধ্যমে তিনি জাতীয় চেতনা, কৃষিজীবন, এবং সাধারণ মানুষের গল্পকে নাট্যমঞ্চে উপস্থাপন করেছেন।

উল্লেখযোগ্য নাটকসমূহ
কীতচন্দ্রের পালা, সাঙ্গবদ্ধের ঘটনা, যৈবতী কন্যার মন, কিত্তনখোলা, চাকা, হাতহদাই, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন। এইসব নাটক শুধু দর্শকদের বিনোদনই দেয়নি, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছে। তিনি ২০০৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন। নাট্যচর্চা ও সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি দেশের ভেতরে ও বাইরে বহু স্বীকৃতি পেয়েছেন।

মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি সেলিম আল দীন মৃত্যুবরণ করেন। তবে তাঁর রেখে যাওয়া নাটক, তত্ত্ব, এবং নাট্যধারা আজও নাট্যচর্চায় প্রাণ সঞ্চার করছে। তাঁকে “নাট্যাচার্য” বলা হয়, যা তাঁর অবদানের যথাযথ স্বীকৃতি। সেলিম আল দীন ছিলেন এমন এক নাট্যকার, যিনি বাংলাদেশি নাটককে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন পরিচিতি দিয়েছেন। তিনি নাটককে গ্রামবাংলার মাটির গন্ধে ভরিয়ে তুলেছিলেন। তাই তিনি কেবল নাট্যকার নন, বরং বাংলাদেশের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।