April 12
বিদ্যাপতি ছিলেন পঞ্চদশ শতকের এক বিশিষ্ট মৈথিলি কবি, যিনি ব্রজবুলি ভাষায় রচিত রাধাকৃষ্ণ প্রেমলীলা বিষয়ক পদাবলির জন্য অমরত্ব লাভ করেন। তার জন্ম মধুবনী জেলার বিসফী গ্রামে, এক বিদ্বান ব্রাহ্মণ পরিবারে। সংস্কৃত, প্রাকৃত ও মৈথিলি ভাষায় ছিল তার অসাধারণ দখল। তিনি কেবল কবিই নন, ছিলেন ঐতিহাসিক, আখ্যানকার, শিক্ষক, রাজনীতি বিশারদ ও শাস্ত্রকার।
তিনি প্রায় ৮০০ পদ রচনা করেন এবং রাজা শিবসিংহসহ ছয়জন রাজা ও একজন রানীর পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। তার রচনার মধ্যে রয়েছে কীর্তিলতা, কীর্তিপতাকা, পুরুষ পরীক্ষা, ভূপরিক্রমা প্রভৃতি। মৈথিলী ভাষার সুরেলা ধ্বনি ও গীতিময়তা বাংলা সাহিত্যে, বিশেষত বৈষ্ণব পদাবলিতে, গভীর প্রভাব ফেলেছে।
বিদ্যাপতির রাধা চরিত্র মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে চিত্রিত — যেখানে কিশোরী রাধার কামনা, বিরহ ও মিলনের অনুভব ফুটে ওঠে জীবন্তভাবে। তিনি চৈতন্য-পূর্ববর্তী কবি হওয়ায় তার কাব্যে বৈষ্ণব তত্ত্বের বদলে মানবিক প্রেমের গভীরতা দেখা যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাপতির পদাবলিকে গভীরতা ও আবেগে সমৃদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন। তার রচনার অলঙ্কার, ছন্দ ও শব্দবিন্যাসে আছে ব্যতিক্রমী কবিত্ব। পরবর্তীকালের বহু কবি তার কাব্যশৈলী অনুসরণ করেছেন। এজন্য বিদ্যাপতি ‘মৈথিল কোকিল’ ও ‘অভিনব জয়দেব’ নামে খ্যাত।